ভারতের বিশ্ব মঞ্চে উত্থান: ২০২৮ সালের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি

ফাইন্যান্স ভিশন
By -
0

ভারতের অর্থনীতি গত দশকে অভূতপূর্বভাবে প্রবৃদ্ধি করেছে। ব্রিটিশ আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে কির স্টারমার জানিয়েছেন, ২০২৮ সালের মধ্যে ভারত তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে বিশ্বমানচিত্রে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করবে। এই লক্ষ্য অর্জনে ভারতের জনসংখ্যা, প্রযুক্তি, বিনিয়োগ এবং কূটনৈতিক কৌশল সব মিলিয়ে এক মহাসমুদ্র তৈরির পথে এগোচ্ছে।

 

https://financebanglainfo.blogspot.com/

ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: মূল চালক শক্তিগুলি

ভারতের জিডিপি গত পাঁচ বছরে গড়ে প্রায় শতাংশ বেড়েছে। ঋতুতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা শক্তিগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • বিপুল জনসংখ্যা কর্মক্ষম জনশক্তি
  • ডিজিটাল রূপান্তর -গভর্ন্যান্স
  • কৃষি থেকে পরিষেবা খাত পর্যন্ত বহুমুখী উন্নয়ন
  • স্থানীয় বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ

৫০০ মিলিয়ন মানুষই বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করে, যা ডিজিটাল অর্থনীতির বীজ বপন করছে।

 

কৌশলগত সংস্কার বিনিয়োগের ভূমিকা


ভারত সরকারের বিভিন্ন নীতি-সংস্কার বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করেছে।

. অর্থনৈতিক সংস্কার

অবসর প্রণোদনা, কর কাঠামো সহজীকরণ শ্রম আইনে নমনীয়তা এনে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো হয়েছে।

. বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগ (FDI)

  • ২০২৪-২৫ অর্থবছরে FDI প্রবাহ প্রায় ৭৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি
  • স্বয়ংসম্পূর্ণ মেক ইন ইন্ডিয়া নীতি; বিদেশি কোম্পানির অংশীদারিত্বে উৎপাদন বৃদ্ধি

. বেসরকারি খাতে অংশগ্রহণ

পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (PPP) মডেলের মাধ্যমে সড়ক, রেল, এয়ারপোর্ট এবং স্মার্ট সিটি প্রকল্পে বেসরকারি বিনিয়োগ ত্বরান্বিত হচ্ছে।

 

প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ডিজিটাল রূপান্তর

ভারত এখন স্টার্টআপ বিশ্বপণ্ডিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে।

  • স্টার্টআপ সংখ্যা ১০০ হাজার ছাড়িয়েছে
  • বায়োটেক, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ক্লিনটেক ইত্যাদিতে বিনিয়োগ বাড়ছে
  • UPI (ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস) দৈনিক ৭০০ মিলিয়ন লেনদেন নিশ্চিত করছে

ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রকল্প সরকারি সেবাকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসেছে, যা শিল্পে স্বচ্ছতা কার্যকারিতা বৃদ্ধি করেছে।

 

অবকাঠামো উন্নয়ন সামাজিক বিনিয়োগ

অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে অবকাঠামো উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

  • পিএম গতি শকতি প্রকল্প: মাল্টিমোডাল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন
  • ভারতটান, নতুন স্থলীয় জলপথ চালু করে লজিস্টিক খাতে বিপ্লব
  • স্মার্ট সিটি মিশনে ১০০ শহরে উন্নত পার্ক, ওয়াই-ফাই, সিসিটিভি পরিবহন ব্যবস্থা

এছাড়া, স্বাস্থ্যখাতে আয়ুষ্মান ভারত যার লক্ষ্য ১০ কোটি পরিবারকে স্বাস্থ্যবিমা নিশ্চিত করা।

 

আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব কূটনৈতিক প্রসার

ভারতের কূটনৈতিক নীতি এখন অর্থনীতির সমান্তরালে কাজ করছে।

  • G20 সভাপতিত্ব (২০২৩): বৈশ্বিক নীতি নির্ধারণে ভূমিকা
  • BRICS সম্প্রসারণ: দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, রাশিয়া, ব্রাজিলের সঙ্গে অর্থনৈতিক চুক্তি
  • Quad (ইউএস, জাপান, অস্ট্রেলিয়া) নিরাপত্তা প্রযুক্তিতে সহযোগিতা

যুক্তরাজ্যের সাথেও সাম্প্রতিক ইন্ডিয়া-ইউকে চুক্তি বাণিজ্য ৪৪ বিলিয়ন পাউন্ড থেকে দ্বিগুণের লক্ষ্য স্থির করেছে।

 

বাস্তব জীবনের উদাহরণ

একটি সত্যিকারের গল্প থেকে দেখা যায় কোভিড পরবর্তী সময়ে কীভাবে ভারত নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছে:

  • Reliance Jio: মাত্র বছরে ৪৮ কোটি গ্রাহক, দেশদরদী ইন্টারনেট
  • Tata Group: বিশ্বজুড়ে পদক্ষেপ, Jaguar Land Rover থেকে চিপ তৈরির উদ্যোগ
  • DRDO HAL: ভারতীয় প্রযুক্তিতে আত্মনির্ভরতা, লোখমি আর বি-৭০ যুদ্ধবিমানের উন্নয়ন
  • স্বল্পমূল্যে ভ্যাকসিন উৎপাদন: ভারত পৃথিবীর ফার্মেসি হিসেবে পরিচিত

২০২৫ সালে ভারতের প্রধান বাণিজ্য চুক্তি

দেশ

বাণিজ্য চুক্তির নাম

স্বাক্ষর / কার্যকর তারিখ

আনুমানিক চুক্তির মূল্য

যুক্তরাজ্য

Comprehensive Economic and Trade Agreement (CETA)

জুলাই ২০২৫

৪৪ বিলিয়ন পাউন্ড বর্তমান বাণিজ্য; দ্বিগুণ করতে লক্ষ্য The Hindu BusinessLine

EFTA (লিকটেনস্টেইন, নরওয়ে, আইসল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড)

Trade & Economic Partnership Agreement (TEPA)

অক্টোবর ২০২৫ (কার্যকর)

১০০ বিলিয়ন USD FDI প্রতিশ্রুতি (১৫ বছর) PMF IAS

উল্লেখিত তথ্যসূত্র:
The Hindu BusinessLine “India-UK free trade pact to reduce import costs, increase trade, generate employment,” The Hindu Businessline.
PMF IAS “India-EFTA Trade & Economic Partnership Agreement (TEPA),” PMF IAS.


গত সপ্তাহে ভারতে আসা ব্রিটিশ বাণিজ্য প্রতিনিধিদল জানিয়েছে যে এই সফর ১.৩ বিলিয়ন পাউন্ডের বিনিয়োগ চুক্তি নিশ্চিত করেছে এবং যুক্তরাজ্যে ১০,০০০ এরও বেশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।

এই সফর যুক্তরাজ্য এবং ভারতের মধ্যে একটি গভীরতর কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের উপর জোর দেয়, যার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিশ্ব বাণিজ্য এবং কূটনীতিতে পড়বে। 


বাণিজ্য চুক্তি

স্টারমার জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদীর যুক্তরাজ্য সফরের সময় স্বাক্ষরিত ভারত-যুক্তরাজ্য সমন্বিত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য চুক্তি (CETA) সম্পর্কে আলোকপাত করেন।

এই চুক্তির লক্ষ্য হল বার্ষিক বর্তমান ৪৪ বিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি করা।


গুগলের ইন্টারনেট এআই হাব:নতুন ভারতের ডিজিটাল ভবিষ্যতের নতুন 

ভারত এখন শুধু বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ নয়, বরং প্রযুক্তি ডিজিটাল উদ্ভাবনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে। ২০২৫ সালে গুগল ঘোষণা করেছে যে তারা ভারতের বিশাখাপত্তনমে একটি বিশাল ইন্টারনেট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) হাব স্থাপন করবে। এই প্রকল্পটি গুগলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ, যার পরিমাণ প্রায় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

 

কোথায় এবং কীভাবে?

  • অবস্থান: বিশাখাপত্তনম, অন্ধ্রপ্রদেশ
  • সময়সীমা: ২০২৬ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে নির্মাণ
  • উদ্দেশ্য: গুগলের প্রথম বৃহত্তম AI এবং ইন্টারনেট হাব, যা ভারতকে বিশ্ব প্রযুক্তি মানচিত্রে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করবে

 

কী থাকছে এই হাবে?

. গিগাওয়াট স্কেল ডেটা সেন্টার

  • সম্পূর্ণভাবে নবায়নযোগ্য শক্তি দ্বারা চালিত
  • উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটিং ক্লাউড স্টোরেজ সুবিধা

. সাবমেরিন ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক

  • ভারতকে যুক্ত করবে বিশ্বের অন্যান্য ডিজিটাল কেন্দ্রের সঙ্গে
  • ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন (CLS) থাকবে বিশাখাপত্তনমে

. পূর্ণাঙ্গ AI স্ট্যাক

  • গবেষণা, উন্নয়ন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার হার্ডওয়্যার
  • স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা শিল্পে AI-এর ব্যবহার বাড়াবে

 

অংশীদারিত্ব সহযোগিতা

এই প্রকল্পে গুগলের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে ভারতের টেলিকম জায়ান্ট Bharti Airtel
এটি ভারতের “Viksit Bharat 2047” ভিশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যার লক্ষ্য একটি উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর ভারত গঠন।

এছাড়া, এই উদ্যোগ ভারতের IndiaAI Mission-এর অংশ, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য করে তুলতে চায়।

 

সম্ভাব্য প্রভাব

অর্থনৈতিক

  • হাজার হাজার উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি
  • স্টার্টআপ প্রযুক্তি কোম্পানির জন্য নতুন সুযোগ
  • আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে

সামাজিক

  • ডিজিটাল শিক্ষা স্বাস্থ্যসেবায় উন্নয়ন
  • গ্রামীণ শহরাঞ্চলে ইন্টারনেট প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি
  • AI-এর মাধ্যমে কৃষি পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা

 

সরকার গুগলের বক্তব্য

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই উদ্যোগকেপ্রযুক্তির গণতন্ত্রীকরণে এক শক্তিশালী পদক্ষেপহিসেবে অভিহিত করেছেন।
গুগলের CEO সুন্দর পিচাই বলেছেন, “ভারত আমাদের জন্য শুধু বাজার নয়, বরং উদ্ভাবনের অংশীদার।

 

বিশাখাপত্তনমে গুগলের AI ইন্টারনেট হাব ভারতের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির এক নতুন অধ্যায়। এটি শুধু একটি অবকাঠামো প্রকল্প নয়, বরং ভবিষ্যতের ডিজিটাল ভারত গঠনের ভিত্তি।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভারত বিশ্বে প্রযুক্তির নেতৃত্বে আরও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাবে।


 উপসংহার

ভারত কেবলমাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি করছে না, পরিবর্তনের নতুন অধ্যায় লিখছে। তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে ২০২৮ সালের লক্ষ্য অর্জনে জনসংখ্যা, শিল্প, প্রযুক্তি, অবকাঠামো কূটনৈতিক সমঝোতাএগুলো মিলেমিশে ভারতের শক্তির পাথেয় গঠন করছে।


আপনারা কী ভাবছেন—ভারতের ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে আপনার মতামত শেয়ার করুন 

আরও পড়ুন: ফাইন্যান্স কথা ব্লগে আরও ব্যবসা ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিশ্লেষণ


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
3/related/default