বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি—চীন ও যুক্তরাষ্ট্র—এর মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ (Trade War) এখন আবার নতুন মাত্রা পেয়েছে। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া এই সংঘাত ২০২৫ সালে এসে আরও তীব্র হয়েছে। নতুন করে ঘোষণা এসেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর ১০০% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবে। এই যুদ্ধ কেবল পণ্যের দামে নয়, বরং পুরো বিশ্ব অর্থনীতির ভারসাম্য ও প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে।
বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা
২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেন যে চীন অন্যায্যভাবে মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন করছে এবং আমদানি-রপ্তানিতে বিশাল ঘাটতি তৈরি করছে। এর পর থেকে শুরু হয় শুল্ক আরোপের পাল্টাপাল্টি লড়াই। চীনও যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য ও প্রযুক্তি পণ্যে পাল্টা শুল্ক বসায়।
প্রধান ক্ষেত্রসমূহ
ক্ষেত্র | যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ | চীনের প্রতিক্রিয়া |
---|---|---|
পণ্য আমদানি | ৩৭৫ বিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি | মার্কিন কৃষিপণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক |
প্রযুক্তি | Huawei, TikTok, ZTE–এর ওপর নিষেধাজ্ঞা | নিজস্ব প্রযুক্তি উন্নয়নে বিনিয়োগ |
মুদ্রানীতি | চীনের ইউয়ান অবমূল্যায়নের অভিযোগ | যুক্তরাষ্ট্রকে বৈশ্বিক মুদ্রা রাজনীতির অভিযুক্ত করা |
অর্থনৈতিক প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রে
- চীনা পণ্য দামি হওয়ায় মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি
- কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ক্ষতি
- প্রযুক্তি কোম্পানিতে অনিশ্চয়তা
চীনে
- রপ্তানি হ্রাস
- বিদেশি বিনিয়োগে সংকট
- তবে নিজস্ব উৎপাদন ও উদ্ভাবনে শক্তিশালী উন্নতি
বৈশ্বিক প্রভাব
এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে:
- সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়েছে (Supply Chain Disruption)
- ভারত, ভিয়েতনাম ও মেক্সিকো নতুন উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসছে
- ডিকাপলিং (Decoupling) প্রবণতা বাড়ছে — অর্থাৎ, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র আলাদা বাণিজ্য ব্লকে ভাগ হচ্ছে
Trump (latest social media posts) — অক্টোবর ২০২৫ আপডেট
English: “Starting November 1st, 2025 (or sooner, depending on any further actions or changes taken by China), the United States of America will impose a Tariff of 100% on China, over and above any Tariff that they are currently paying.”
বাংলা অনুবাদ: “২০২৫ সালের ১ নভেম্বর (অথবা চীনের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করে আরও আগেই) থেকে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর ১০০% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবে।”
সূত্র: Reuters
English: “No reason to meet Xi Jinping now.”
বাংলা অনুবাদ: “এখন Xi Jinping-এর সঙ্গে বৈঠকের কোনো কারণ নেই।”
সূত্র: Reuters
English: “BREAKING: The US will slap an additional 100% tariff on imports from China and impose export controls on all critical US-made software.”
বাংলা অনুবাদ: “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০০% শুল্ক আরোপ করবে এবং গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আনবে।”
সূত্র: Reuters on X
মাত্র এক ঘণ্টায় $৭ বিলিয়নের বেশি হারিয়ে গেছে! ট্রাম্পের ১৩০% চীনা শুল্ক ঘোষণা বিশ্বব্যাপী ক্রিপ্টো বাজারে ধস নামিয়েছে
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন চীনা পণ্যের উপর অতিরিক্ত ১০০% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে, যার ফলে মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ১৩০%। এই পদক্ষেপটি চীনের দুর্লভ খনিজ পদার্থের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের প্রতিক্রিয়ায় নেওয়া হয়েছে, যা আধুনিক প্রযুক্তি ও বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কী ঘটেছে?
- বিটকয়েন এক ঘণ্টার মধ্যে ৮.৪% কমে $104,782-এ নেমে আসে।
- ইথেরিয়াম ৫.৮% কমে $3,637-এ পৌঁছায়।
- বিনান্স কয়েন ৬.৬%, XRP ২২.৮% কমে যায়।
- Tether স্থিতিশীল থাকে $1-এর কাছাকাছি।
- Coinglass-এর তথ্যমতে, ২৪ ঘণ্টায় $১০ বিলিয়নের বেশি হারিয়ে গেছে ক্রিপ্টো বাজার থেকে।
কেন এই ধস?
- ট্রাম্পের ঘোষণার ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
- লিভারেজড ট্রেডিং পজিশনগুলো দ্রুত লিকুইডেট হয়ে যায়, যার ফলে ১.৬ মিলিয়নের বেশি ট্রেডার ক্ষতিগ্রস্ত হন।
- বিটকয়েনের $120,000 সাপোর্ট লেভেল ভেঙে যাওয়ায় বাজারে আরও প্যানিক ছড়ায়।
বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব
এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র হয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, চীনের পদক্ষেপ “অবিশ্বাস্য” এবং তিনি কোনও আলোচনার প্রয়োজন দেখছেন না। নতুন শুল্ক ১ নভেম্বর ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে।
বর্তমান পরিস্থিতি (২০২৫ সালের প্রেক্ষাপটে)
২০২৫ সালের অক্টোবর নাগাদ দেখা যাচ্ছে—চীন-আমেরিকার সম্পর্ক আরও ঠান্ডা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক ও প্রযুক্তি-নিয়ন্ত্রণে কড়া অবস্থান নিচ্ছে। চীনও পাল্টা পরিকল্পনা হিসেবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নতুন বাণিজ্য চুক্তি ও নিজস্ব সফটওয়্যার ইকোসিস্টেম তৈরি করছে।
উপসংহার
চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ এখন কেবল অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা নয়—এটি প্রযুক্তি, নেতৃত্ব ও বৈশ্বিক প্রভাবের নতুন অধ্যায়। নভেম্বর ২০২৫-এ কার্যকর হতে যাওয়া ১০০% শুল্ক বিশ্ববাজারে আবারও অস্থিরতা আনবে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই সংঘাত আগামী দশকে বিশ্বের অর্থনৈতিক মানচিত্র নতুনভাবে লিখে দেবে।
সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
১. বাণিজ্য যুদ্ধ বলতে কী বোঝায়?
দুটি দেশের মধ্যে পারস্পরিক শুল্ক আরোপ ও বাণিজ্য বাধা সৃষ্টি করাকেই বাণিজ্য যুদ্ধ বলা হয়।
২. নতুন শুল্ক কখন কার্যকর হবে?
১ নভেম্বর ২০২৫ থেকে (ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণামতে)।
৩. ভারত কীভাবে প্রভাবিত হচ্ছে?
অনেক মার্কিন ও ইউরোপীয় কোম্পানি চীনের বদলে ভারতে উৎপাদন স্থানান্তর করছে, ফলে ভারতের শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।
ডিসক্লেইমার:
এই ব্লগে প্রকাশিত তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞানের আমাদের সাথে থাকুন, নতুন তথ্য, এবং দিকনির্দেশনার জন্য নিয়মিত ভিজিট করুন ও আপনার মতামত জানান।
পরবর্তী পোস্ট :ট্রাম্পের "ভুল নীতি" কি মার্কিন অর্থনীতিকে ডুবিয়ে দিচ্ছে? বিশ্লেষণমূলক আলোচনা