আপনি কি লোন নিতে চান পার্সোনাল অথবা বিজনেস - কী কী করণীয় জেনে নিন

ফাইন্যান্স ভিশন
By -
0

 জীবনে অনেক সময় এমন পরিস্থিতি আসে যখন আমাদের জরুরি অর্থের প্রয়োজন হয়। হয়তো ব্যক্তিগত কোনো কাজের জন্য, যেমন বিয়ে, শিক্ষা, বা চিকিৎসা খরচ, অথবা ব্যবসা শুরু বা সম্প্রসারণের জন্য। এই ধরনের পরিস্থিতিতে লোন একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে। কিন্তু লোন নেওয়ার আগে কী কী করণীয়, কীভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন, তা না জানলে আপনি সমস্যায় পড়তে পারেন। এই নিবন্ধে আমরা ভারতে পার্সোনাল এবং বিজনেস লোন নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং বিবেচনার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।

লোন কী এবং কেন প্রয়োজন?

লোন হলো এমন একটি আর্থিক সুবিধা, যেখানে আপনি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ধার নেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুদসহ তা ফেরত দেন। পার্সোনাল লোন সাধারণত ব্যক্তিগত প্রয়োজনের জন্য নেওয়া হয়, যেমন ছুটিতে যাওয়া, বাড়ি সংস্কার, বা জরুরি খরচ। অন্যদিকে, বিজনেস লোন ব্যবসা শুরু, যন্ত্রপাতি কেনা, বা কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। আপনার প্রয়োজন বুঝে সঠিক লোন বেছে নেওয়া জরুরি।

লোন নেওয়ার আগে কী কী বিবেচনা করবেন?

লোন নেওয়া একটি বড় আর্থিক সিদ্ধান্ত। তাই এর আগে কিছু বিষয় ভালোভাবে বিবেচনা করা উচিত:

১. আপনার প্রয়োজন নির্ধারণ করুন

প্রথমেই নিজেকে প্রশ্ন করুন—আপনার লোন কেন দরকার? পার্সোনাল লোনের জন্য কি এটি জরুরি খরচ, নাকি বিজনেস লোনের জন্য বিনিয়োগ? প্রয়োজনের পরিমাণ ঠিক করুন। অতিরিক্ত লোন নিলে পরিশোধে সমস্যা হতে পারে।

২. আয়ের উৎস পরীক্ষা করুন

লোন পরিশোধ করতে আপনার নিয়মিত আয় থাকা জরুরি। বেতনভোগী হলে আপনার মাসিক বেতন, আর ব্যবসায়ী হলে ব্যবসার আয় বিবেচনা করুন। আপনার আয়ের ৩০-৪০% এর বেশি কিস্তি হওয়া উচিত নয়, যাতে দৈনন্দিন খরচ চালাতে সমস্যা না হয়।

৩. ক্রেডিট স্কোর যাচাই করুন

ভারতে লোন পাওয়ার জন্য ক্রেডিট স্কোর গুরুত্বপূর্ণ। ৭৫০ বা তার বেশি স্কোর থাকলে সহজে লোন পাওয়া যায় এবং সুদের হারও কম হয়। CIBIL-এর মাধ্যমে আপনার স্কোর চেক করুন। স্কোর কম হলে তা উন্নত করার চেষ্টা করুন।

৪. সুদের হার এবং শর্তাবলী তুলনা করুন

বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদের হার তুলনা করুন। পার্সোনাল লোনের সুদ সাধারণত ১০-২৪% এবং বিজনেস লোনের ১২-২০% হতে পারে। এছাড়া প্রসেসিং ফি, লোনের মেয়াদ, এবং জরিমানার শর্তাবলী দেখে নিন।

৫. ডকুমেন্টেশন প্রস্তুত করুন

লোনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আগে থেকে প্রস্তুত রাখুন। সাধারণত যা লাগে:

  • পরিচয়পত্র: আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার আইডি।

  • ঠিকানার প্রমাণ: বিদ্যুৎ বিল, পাসপোর্ট।

  • আয়ের প্রমাণ: বেতনভোগীদের জন্য স্যালারি স্লিপ, ব্যবসায়ীদের জন্য আইটিআর বা ব্যবসার হিসাব।

  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট: গত ৩-৬ মাসের।

লোন নেওয়ার পদক্ষেপ

এবার দেখে নিন লোন নেওয়ার ধাপগুলো:

১. সঠিক লোন প্রতিষ্ঠান বেছে নিন

ভারতে SBI, HDFC, ICICI-এর মতো ব্যাংক বা Bajaj Finance, TVS Credit-এর মতো NBFC থেকে লোন নিতে পারেন। অনলাইন অ্যাপ যেমন KreditBee, MoneyTap-ও জনপ্রিয়। আপনার প্রয়োজন ও সুবিধা অনুযায়ী বেছে নিন।

২. আবেদন করুন

অনলাইন বা অফলাইনে আবেদন করতে পারেন। অনলাইনে আবেদন করলে সময় কম লাগে এবং কাগজপত্র আপলোড করা সহজ। ব্যাংকে গিয়ে আবেদন করলে সরাসরি আলোচনার সুযোগ পাবেন।

৩. যাচাই প্রক্রিয়া

আবেদন জমা দেওয়ার পর ব্যাংক আপনার ক্রেডিট স্কোর, আয়, এবং ডকুমেন্ট যাচাই করবে। এটি ১-৭ দিন সময় নিতে পারে।

৪. লোন অনুমোদন ও বিতরণ

যাচাই সফল হলে লোন অনুমোদিত হবে। টাকা আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে। পার্সোনাল লোনের ক্ষেত্রে এটি দ্রুত হয়, তবে বিজনেস লোনের জন্য সময় বেশি লাগতে পারে।

লোন পরিশোধের পরিকল্পনা

লোন নেওয়ার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সময়মতো কিস্তি পরিশোধ। এজন্য:

  • মাসিক বাজেট তৈরি করুন।

  • EMI ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে কিস্তির পরিমাণ আগে থেকে জেনে নিন।

  • দেরি হলে জরিমানা এড়াতে অটো-ডেবিট সুবিধা চালু করুন।



ঋণ আবেদন প্রক্রিয়া

ঋণ আবেদন প্রক্রিয়া হল ধাপে ধাপে একটি পদ্ধতি যা ধারকারীদের ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পেতে অনুসরণ করতে হয়। প্রক্রিয়াটি ঋণের ধরন, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এবং ধারকারীর ব্যক্তিগত পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে, সাধারণ প্রক্রিয়াটিতে সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে:

প্রাক-অনুমোদন: ঋণ আবেদন প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হল প্রাক-অনুমোদন। প্রাক-অনুমোদনের সময়, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ধারকারীর আর্থিক তথ্য পর্যালোচনা করবে এবং তারা কত পরিমাণ ঋণের জন্য প্রাক-অনুমোদিত হয়েছেন তা নির্ধারণ করবে। এটি ধারকারীদেরকে তারা কত পরিমাণ ঋণ নিতে পারেন এবং তাদের সুদের হার কত হবে সে সম্পর্কে একটি ধারণা পেতে সহায়তা করতে পারে।

আবেদন: ধারকারী যখন প্রাক-অনুমোদিত হন, তখন তাদের একটি আনুষ্ঠানিক ঋণ আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। এতে সাধারণত ধারকারীর আয়, কর্মসংস্থানের ইতিহাস এবং ক্রেডিট ইতিহাস সম্পর্কিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে।

অনুমোদন: এরপর ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ঋণ আবেদনপত্রটি অনুমোদন করবে। এর মধ্যে ধারকারীর আর্থিক তথ্য পর্যালোচনা করা এবং তারা ঋণ দেওয়ার জন্য ভালো ঝুঁকি কিনা তা নির্ধারণ করা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ক্লোজিং: যদি ধারকারী ঋণের জন্য অনুমোদিত হন, তবে তাদের ঋণের নথিপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে। একে ঋণ বন্ধ বলে।

ঋণ আবেদন প্রক্রিয়াটি একটি জটিল এবং সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয়া হতে পারে। তবে, আপনি সর্বোত্তম ঋণ শর্তাবলী পেতে নিশ্চিত হতে ধাপগুলি সাবধানে অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

সফল ঋণ আবেদনের জন্য টিপস

সফল ঋণ আবেদনের জন্য এখানে কিছু টিপস রয়েছে:

  • বাড়ি কেনার আগে প্রাক-অনুমোদন পান। এটি আপনাকে কত পরিমাণ ঋণ নিতে পারেন এবং আপনার সুদের হার কত হবে তা নির্ধারণ করতে সহায়তা করবে।

  • আপনার সমস্ত আর্থিক নথিপত্র সঠিকভাবে রাখুন। এটি আপনাকে ঋণ আবেদন প্রক্রিয়াটি আরও দ্রুত এবং সহজে সম্পন্ন করতে সহায়তা করবে।

  • আপনার আয়, কর্মসংস্থানের ইতিহাস এবং ক্রেডিট ইতিহাস সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত থাকুন।

  • ধৈর্য ধরুন। ঋণ আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে কয়েক সপ্তাহ বা এমনকি কয়েক মাস সময় নিতে পারে।

সাধারণ ঋণ আবেদন শর্তাবলী

এখানে কিছু সাধারণ ঋণ আবেদন শর্তাবলী রয়েছে:

  • APR (Annual Percentage Rate): আপনি আপনার ঋণে যে সুদের হার প্রদান করবেন তা হল বার্ষিক শতাংশ হার।

  • ক্রেডিট স্কোর: আপনার ক্রেডিট স্কোর হল একটি সংখ্যা যা আপনার ক্রেডিটযোগ্যতা প্রতিনিধিত্ব করে।

  • ঋণ-আয় অনুপাত: আপনার ঋণ-আয় অনুপাত হল আপনার মাসিক ঋণ পরিশোধের আপনার মাসিক মোট আয়ের সাথে অনুপাত।

  • ডাউন পেমেন্ট: ডাউন পেমেন্ট হল ক্রয় মূল্যের একটি অংশ যা আপনি অগ্রিম প্রদান করেন।

  • মর্টগেজ বীমা: মর্টগেজ বীমা হল এমন একটি বীমা যা যদি আপনি আপনার ঋণে ডিফল্ট করেন তবে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষা দেয়।

  • প্রাক-অনুমোদন: প্রাক-অনুমোদন হল একটি প্রক্রিয়া যার মধ্যে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান আপনার আর্থিক তথ্য পর্যালোচনা করে এবং আপনি কত পরিমাণ ঋণের জন্য প্রাক-অনুমোদিত হয়েছেন তা নির্ধারণ করে।

  • অনুমোদন: অনুমোদন হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মধ্যে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান আপনার ঋণ আবেদনপত্র পর্যালোচনা করে এবং আপনি ঋণ দেওয়ার জন্য ভালো ঝুঁকি কিনা তা নির্ধারণ করে।


সতর্কতা

  • অতিরিক্ত লোন নেবেন না, যা পরিশোধ করা কঠিন হবে।

  • লোনের শর্তাবলী ভালোভাবে পড়ুন।

  • অবৈধ বা উচ্চ সুদের লোনদাতা থেকে দূরে থাকুন।

উপসংহার

পার্সোনাল বা বিজনেস লোন আপনার স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করতে পারে, তবে সঠিক পরিকল্পনা ও সচেতনতা জরুরি। আপনার আর্থিক সামর্থ্য বুঝে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে, এবং সঠিক প্রতিষ্ঠান থেকে লোন নিন। তাহলে আপনি ঝামেলা ছাড়াই আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।

লোন নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন বা আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
3/related/default