ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতি: ভিত্তি, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

ফাইন্যান্স ভিশন
By -
0

ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৫% মানুষ গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাস করেন। কৃষি, পশুপালন, হস্তশিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প—এই সবই গ্রামীণ অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। ডিজিটাল প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এই খাতেও পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। এই প্রবন্ধে আমরা গ্রামীণ অর্থনীতির কাঠামো, বর্তমান চিত্র, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করব।

গ্রামীণ অর্থনীতির কাঠামো

  • কৃষি খাত: ধান, গম, পাট, সবজি, ফলমূল উৎপাদন।
  • পশুপালন ও মৎস্য: গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, মাছ চাষ।
  • হস্তশিল্প ও কুটির শিল্প: বাঁশ-বেত, মাটির পণ্য, নকশিকাঁথা।
  • সেবা খাত: গ্রামীণ ব্যাংক, ক্ষুদ্র ঋণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সেবা।

পরিসংখ্যান ও বর্তমান চিত্র

খাত অবদান (GDP-তে) কর্মসংস্থান
কৃষি ১৪.৫% ৪২%
ক্ষুদ্র শিল্প ৬.৩% ১১%
পশুপালন ও মৎস্য ৩.২% ৭%
  • ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত সরকার ₹২.১ লক্ষ কোটি বরাদ্দ করেছে গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য।
  • PM-KISAN স্কিমের মাধ্যমে ৮ কোটি কৃষক বছরে ₹৬,০০০ করে পাচ্ছেন।
  • ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রামীণ অঞ্চলে UPI লেনদেন বেড়েছে ৩৫%।

বিশেষজ্ঞ মতামত

  • RBI বলছে, গ্রামীণ অর্থনীতিতে ফিনটেকডিজিটাল ব্যাংকিং বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
  • NABARD-এর মতে, ক্ষুদ্র ঋণসেল্ফ হেল্প গ্রুপ (SHG)-এর মাধ্যমে নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন হচ্ছে।
  • World Bank বলছে, ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতি স্মার্ট কৃষিসাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট-এর দিকে এগোচ্ছে।

বাস্তব উদাহরণ

  • পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার কৃষকরা এখন ড্রিপ ইরিগেশন ব্যবহার করছেন, যা জল সাশ্রয় করে।
  • বিহারের মধুবনী অঞ্চলে নারীরা মধুবনী চিত্রকলা বিক্রি করে মাসে ₹১০,০০০ পর্যন্ত আয় করছেন।
  • উত্তরপ্রদেশের বারাবাঁকি-তে UPI QR কোড ব্যবহার করে চা দোকানদাররা ডিজিটাল লেনদেন করছেন।

চ্যালেঞ্জ

১. প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা

  • ইন্টারনেট সংযোগের অভাব।
  • স্মার্টফোন ও ডিজিটাল লিটারেসির ঘাটতি।

২. প্রাকৃতিক দুর্যোগ

  • খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় কৃষি উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে।

৩. বাজারজাতকরণ সমস্যা

  • কৃষকরা ন্যায্য দাম পান না।
  • মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য।

৪. ঋণ ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি

  • অনেক কৃষক অনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে।
  • মহাজনদের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে হয়।

 ডিজিটাল পেমেন্টের প্রভাব

  • UPI, AEPS, DBT-এর মাধ্যমে সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছাচ্ছে।
  • জমির দলিল, কৃষি ভর্তুকি, স্বাস্থ্য বিমা সবই এখন অনলাইনে।
  • গ্রামীণ নারীরা এখন ডিজিটাল লেনদেন শিখে উদ্যোক্তা হচ্ছেন।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

  • AI ও IoT-এর মাধ্যমে স্মার্ট কৃষি চালু হবে।
  • ডিজিটাল রুপিCBDC গ্রামীণ লেনদেনকে আরও সহজ করবে।
  • গ্রামীণ স্টার্টআপঅ্যাগ্রিটেক কোম্পানি-র মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়বে।

উপসংহার

ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতি শুধু কৃষি নির্ভর নয়, এটি একটি বহুমাত্রিক ও সম্ভাবনাময় খাত। ডিজিটাল প্রযুক্তি, সরকারি নীতিমালা, এবং জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব। চ্যালেঞ্জ থাকলেও, সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রামীণ ভারত হতে পারে আত্মনির্ভর ভারতের ভিত্তি


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
3/related/default