২০২৫ সালের জন্য আয়কর দাখিলের : সময়সীমা মেনে চলুন, কিন্তু নিজেকে ক্লান্ত করবেন না

ফাইন্যান্স ভিশন
By -
0

 ভারতে আয়কর দাখিলের সময় অনেকের জন্যই চাপের সময়। সময়সীমা কাছে এলে চাপ আরও বাড়ে। অফিসের কাজ, পরিবারের দায়িত্ব আর ট্যাক্স সংক্রান্ত কাগজপত্র — সব একসাথে সামলানো কষ্টকর। তবে কিছু সহজ অভ্যাস মেনে চললে এই চাপ অনেক কমানো যায়। এতে সময়সীমা মেনে চলা যাবে এবং শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তিও কম হবে।

প্রথমেই নিজের কর সংক্রান্ত নথি গুছিয়ে রাখা জরুরি। বছরের শুরু থেকেই আয়, খরচ, বিনিয়োগ এবং কাটছাঁট সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র এক জায়গায় রাখুন। কেউ যদি প্রতিমাসে এই কাজ করে তবে শেষ মুহূর্তে চাপ পড়বে না। ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ফর্ম ১৬, বিনিয়োগ প্রমাণপত্র এগুলো হাতে থাকলে কর দাখিল দ্রুত হবে।

অনেকেই শেষ মুহূর্তে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট বা ট্যাক্স কনসালট্যান্টের কাছে যান। এতে অনেক সময় অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া কঠিন হয়। আগে থেকে যোগাযোগ করলে তারা আপনার ফাইল মনোযোগ দিয়ে দেখতে পারবেন। আপনি যদি নিজে ট্যাক্স দাখিল করেন তবে আয়কর বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট আগে থেকে দেখে নিন। প্রয়োজন হলে ই-ফাইলিং পোর্টালের নতুন নিয়মগুলো শিখে নিন।

সময় ব্যবস্থাপনা এখানে সবচেয়ে বড় বিষয়। কাজটাকে এক দিনে শেষ করার চেষ্টা না করে ভাগ করে করুন। একদিন শুধু নথি সাজান, আরেকদিন ক্যালকুলেশন করুন, পরে ফর্ম পূরণ করুন। এতে মাথায় চাপ কম পড়বে। সময়সীমার অন্তত এক সপ্তাহ আগে কাজ শেষ করার চেষ্টা করুন যাতে শেষ মুহূর্তের কোনও সমস্যা হলে ঠিক করার সময় থাকে।

কাজের মধ্যে ছোট বিরতি নিন। দীর্ঘ সময় একটানা নথি নিয়ে বসলে ক্লান্তি আসে। একটু হাঁটাহাঁটি করুন, জল খান, চোখ বিশ্রাম দিন। শারীরিক সুস্থতা থাকলে মনও সতেজ থাকবে, কাজও দ্রুত হবে।

কর দাখিলের আগে যা প্রস্তুত রাখা দরকার

বিষয়কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন
আয়ের প্রমাণ            ফর্ম ১৬, বেতন স্লিপ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করুন
বিনিয়োগের কাগজপত্র            PPF, ELSS, LIC, FD এর প্রমাণপত্র হাতের কাছে রাখুন
ব্যয়ের প্রমাণ           শিক্ষা ফি, স্বাস্থ্য বিমা, চিকিৎসা খরচের বিল জমা রাখুন
আগের বছরের ট্যাক্স রিটার্নআগের বছরের কপি দেখে তথ্য যাচাই করুন
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তথ্য       সঠিক অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং IFSC কোড চেক করুন


প্রযুক্তি ব্যবহার করাও সহায়ক। এখন অনেক ট্যাক্স ফাইলিং সফটওয়্যার ও অ্যাপ আছে যা হিসাব মিলিয়ে দেয় এবং ভুল কমায়। তবে যেকোনও অ্যাপ ব্যবহার করার আগে তার বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করুন। সরকারি স্বীকৃত অ্যাপ বা পরিচিত পরিষেবা ব্যবহার করাই নিরাপদ।

মানসিক চাপ এড়াতে অগ্রাধিকার ঠিক করা জরুরি। এই সময়ে অপ্রয়োজনীয় কাজ সরিয়ে রাখুন। কর দাখিলের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মনোযোগ অন্যদিকে না সরান। পরিবার বা সহকর্মীদের জানিয়ে দিন যে এই সময়ে আপনার হাতে অন্য কাজের সময় কম।

যারা প্রথমবার কর দাখিল করছেন তাদের জন্য এটি আরও চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তাই বন্ধু বা পরিবারের সাহায্য নিতে পারেন যারা আগে এই কাজ করেছেন। প্রয়োজনে কোনও পেশাদারের সাহায্য নিন। এতে সময় বাঁচবে এবং ভুলের সম্ভাবনা কমবে।

অফিস বা ব্যবসার কাজের পাশাপাশি কর দাখিলের প্রস্তুতি নিতে গেলে সময়সীমা মেনে চলা কঠিন মনে হতে পারে। তবে কাজের পরিকল্পনা থাকলে এই চ্যালেঞ্জ সহজ হয়। প্রতিদিন সামান্য সময় এই কাজে দিলে চাপ কমবে।

ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় সব তথ্য সঠিকভাবে দেওয়া জরুরি। ভুল তথ্য দিলে পরে নোটিস বা জরিমানা হতে পারে। তাই তাড়াহুড়ো না করে যাচাই করুন। প্রতিটি সংখ্যা, নাম এবং অ্যাকাউন্ট নম্বর সঠিক আছে কিনা নিশ্চিত করুন।

নিজেকে চাপমুক্ত রাখতে কাজের সময় ঘুম, খাবার আর বিশ্রামের দিকে নজর রাখুন। অনিদ্রা বা অস্বাস্থ্যকর খাবার ক্লান্তি বাড়ায়। পর্যাপ্ত ঘুম এবং পুষ্টিকর খাবার আপনার মনোযোগ বাড়াবে।

যদি আপনার কর সংক্রান্ত অবস্থা জটিল হয় যেমন একাধিক আয়ের উৎস বা বিদেশি লেনদেন থাকে, তবে আগে থেকেই বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন। এতে শেষ মুহূর্তের জটিলতা এড়ানো যাবে।

এছাড়া কোনও কারণে সময়মতো কর দাখিল করা সম্ভব না হলে আয়কর বিভাগের প্রদত্ত বর্ধিত সময়সীমা (যদি ঘোষণা হয়) নজরে রাখুন। তবে এটি নির্ভরযোগ্য সমাধান নয়। নিয়মিত সময়সীমা মেনে চলার অভ্যাস তৈরি করাই ভালো।

২০২৫ সালে প্রযুক্তি ও অনলাইন ফাইলিং সিস্টেম আগের চেয়ে দ্রুত ও উন্নত। তবে সিস্টেমে অনেকেই একসাথে লগ ইন করলে ধীর হয়ে যেতে পারে। তাই শেষ দিনে জমা দেওয়ার জন্য অপেক্ষা না করাই ভালো।

সবশেষে মনে রাখুন, কর দাখিল একটি দায়িত্ব। সময়সীমা মেনে কাজ করলে কেবল জরিমানা এড়ানো যায় না, নিজের মানসিক শান্তিও বজায় থাকে। নিয়মিত পরিকল্পনা, নথি গুছিয়ে রাখা এবং প্রয়োজন হলে পেশাদারের সাহায্য নেওয়াই আপনাকে চাপমুক্ত রাখবে।


সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)

প্রশ্ন ১: ২০২৫ সালের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ কবে?
উত্তর: সাধারণত ব্যক্তিগত করদাতাদের জন্য শেষ তারিখ ৩১ জুলাই ২০২৫, বর্ধিত তারিখ ১৫-০৯-২০২৫ তবে সরকার বিশেষ পরিস্থিতিতে বাড়াতে পারে।

প্রশ্ন ২: সময়সীমা মিস করলে কী হবে?
উত্তর: বিলম্বিত রিটার্ন জমা দিতে হবে এবং জরিমানা দিতে হতে পারে, এছাড়া সুদও ধার্য হতে পারে।

প্রশ্ন ৩: অনলাইন না অফলাইন, কোনটা ভালো?
উত্তর: এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনলাইন ফাইলিং দ্রুত ও নিরাপদ, বিশেষ করে সরকারি ই-ফাইলিং পোর্টাল ব্যবহার করলে।

প্রশ্ন ৪: প্রথমবার কর দাখিল করছি, কীভাবে শুরু করব?
উত্তর: প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করুন, আয়কর পোর্টালে নিবন্ধন করুন এবং ধাপে ধাপে ফর্ম পূরণ করুন। প্রয়োজনে পেশাদারের সাহায্য নিন।

eportal.incometax.gov.in — করদাতারা সরাসরি এই পোর্টাল ব্যবহার করে আয়কর রিটার্ন ফাইল, পেমেন্ট, এবং অন্যান্য ট্যাক্স সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেন।

অফিসিয়াল আয়কর তথ্য ও সাধারণ সার্ভিস[Income Tax Department, India (CBDT)]
একাধিক সরকারি ট্যাক্স সেবা এক জায়গায়[India.gov.in – Income Tax Department]
সরাসরি ITR ফাইলিং ও e-পেমেন্ট[eportal.incometax.gov.in]

এই লিঙ্কগুলো ব্যবহার করে আপনি আয়কর সম্পর্কিত সকল গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা সহজে এবং নির্ভুলভাবে অ্যাক্সেস করতে পারবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
3/related/default