ভারতীয় শেয়ার বাজারে কোম্পানি তালিকাভুক্তি:
ভারতীয় শেয়ার বাজারে কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়া মানে কোম্পানির জন্য এক
নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হওয়া। এর মাধ্যমে কোম্পানি পুঁজি সংগ্রহ করতে পারে, পরিচিতি বাড়াতে পারে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে পারে। তবে, এই প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এবং কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। এই নিবন্ধে, আমরা ভারতীয় শেয়ার বাজারে কোম্পানি তালিকাভুক্তির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া, যোগ্যতা, সুবিধা এবং অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্তির গুরুত্ব:
একটি কোম্পানির জন্য শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর
মাধ্যমে কোম্পানি:
·
পুঁজি সংগ্রহ: শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে সহজে পুঁজি সংগ্রহ করতে পারে।
·
পরিচিতি বৃদ্ধি: তালিকাভুক্তির ফলে কোম্পানির পরিচিতি এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে।
·
শেয়ারহোল্ডারদের সুবিধা: শেয়ারহোল্ডাররা সহজে শেয়ার কেনা-বেচা করতে পারেন।
·
কর্মচারীদের সুবিধা: কোম্পানি কর্মচারীদের জন্য স্টক অপশন চালু করতে পারে।
ভারতীয় শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া:
ভারতীয় শেয়ার বাজারে কোম্পানি তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়াটি প্রধানত দুটি স্টক এক্সচেঞ্জে সম্পন্ন হয়:
·
বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (BSE): এশিয়ার প্রাচীনতম স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম।
·
ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (NSE): ভারতের অন্যতম প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জ।
NSE-তে কোম্পানি তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া:
1.
প্রাথমিক প্রস্তুতি: কোম্পানিকে তালিকাভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি এবং তথ্য প্রস্তুত করতে হবে।
2.
মার্চেন্ট ব্যাংকারের নিয়োগ: কোম্পানিকে একজন মার্চেন্ট ব্যাংকার নিয়োগ করতে হবে, যিনি তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করবেন।
3.
ড্রাফ্ট রেড হেরিং প্রসপেক্টাস (DRHP) জমা দেওয়া: কোম্পানিকে সেবির (SEBI - Securities and Exchange Board of India) কাছে DRHP জমা দিতে হবে, যেখানে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, ব্যবসা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখ থাকবে।
4.
সেবির অনুমোদন: সেবি DRHP পর্যালোচনা করে এবং অনুমোদন দেয়।
5.
ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং (IPO): কোম্পানি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রির জন্য IPO চালু করে।
6.
তালিকাভুক্তি: IPO সফল হলে, কোম্পানি NSE-তে তালিকাভুক্ত হয়।
ভারতীয় স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির যোগ্যতা মানদণ্ড:
ভারতীয় স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির জন্য কোম্পানিকে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়। এই
শর্তগুলো সেবি দ্বারা নির্ধারিত হয় এবং নিয়মিত পরিবর্তন হতে পারে।
·
ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন এবং নেট ওর্থ: সেবি নির্ধারিত মান অনুযায়ী হতে হবে।
·
আর্থিক প্রতিবেদন: কমপক্ষে তিন বছরের আর্থিক প্রতিবেদন থাকতে হবে।
·
পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা: স্বচ্ছ এবং পেশাদার হতে হবে।
·
আইনি সমস্যা: কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো গুরুতর আইনি সমস্যা বা অভিযোগ থাকা উচিত নয়।
NSE-তে তালিকাভুক্তির যোগ্যতা মানদণ্ড:
NSE-তে তালিকাভুক্তির জন্য অতিরিক্ত কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়:
·
ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন এবং নেট ওর্থ: BSE-এর তুলনায় বেশি হতে পারে।
·
পাবলিক ফ্লোট: শেয়ারের ন্যূনতম পাবলিক ফ্লোট থাকতে হবে।
·
ট্রেডিং ভলিউম এবং লিকুইডিটি: শেয়ারের ট্রেডিং ভলিউম এবং লিকুইডিটি ভালো হতে হবে।
স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির প্রয়োজনীয়তা:
·
তালিকাভুক্তি চুক্তি: সেবির তালিকাভুক্তি চুক্তি মেনে চলতে হবে।
·
আর্থিক প্রতিবেদন: নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
·
শেয়ারহোল্ডারদের অধিকার: শেয়ারহোল্ডারদের অধিকার রক্ষা করতে হবে।
·
কর্পোরেট গভর্নেন্স: কর্পোরেট গভর্নেন্সের নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।
শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্তির সুবিধা:
·
পুঁজি সংগ্রহ: শেয়ার বিক্রি করে সহজে পুঁজি সংগ্রহ করা যায়।
·
পরিচিতি বৃদ্ধি: কোম্পানির পরিচিতি এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে।
·
শেয়ারহোল্ডারদের সুবিধা: শেয়ারহোল্ডাররা সহজে শেয়ার কেনা-বেচা করতে পারেন।
·
কর্মচারীদের সুবিধা: কোম্পানি কর্মচারীদের জন্য স্টক অপশন চালু করতে পারে।
শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্তির অসুবিধা:
·
নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি: সেবির নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়, যা কোম্পানির স্বাধীনতা কমাতে পারে।
·
প্রকাশনার বাধ্যবাধকতা: নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদন এবং অন্যান্য তথ্য প্রকাশ করতে হয়।
·
খরচ: তালিকাভুক্তি প্রক্রিয়া এবং নিয়মিত নিয়মকানুন মেনে চলার খরচ অনেক বেশি।
·
শেয়ারের দামের অস্থিরতা: শেয়ারের দাম বাজারের অস্থিরতার কারণে ওঠানামা করতে পারে।
ভারতীয় শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা:
বর্তমানে BSE-তে
প্রায় ৫০০০-এর বেশি এবং NSE-তে প্রায় ২০০০-এর বেশি কোম্পানি তালিকাভুক্ত আছে। এই সংখ্যা বাজারের অবস্থা এবং নতুন তালিকাভুক্তির উপর নির্ভর করে।
উপসংহার:
ভারতীয় শেয়ার বাজারে কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে, এর
জন্য সঠিক পরিকল্পনা এবং নিয়মকানুন মেনে চলা জরুরি। এই নিবন্ধে আলোচিত বিষয়গুলো কোম্পানিকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
কিওয়ার্ড: ভারতীয় শেয়ার বাজার, কোম্পানি তালিকাভুক্তি, NSE, BSE, IPO, SEBI, স্টক এক্সচেঞ্জ, তালিকাভুক্তি যোগ্যতা, তালিকাভুক্তি সুবিধা, তালিকাভুক্তি অসুবিধা।